[ADINSERTER AMP] [ADINSERTER AMP]

মহাসড়ক অবরোধ রাবি শিক্ষার্থীদের

সরকারি নিয়োগের ক্ষেত্রে প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটা ব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালে দেওয়া প্রজ্ঞাপন পুনর্বহালের দাবিতে আজও মহাসড়ক অবরোধ করেছে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) শিক্ষার্থীরা। পরে দেড়ঘণ্টা সেখানে অবস্থান নেন। এসময় যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়।

শনিবার (৬ জুলাই) সকাল ১০টা থেকে সতেরোটি হল ও মেস থেকে সিনেট ভবন সংলগ্ন প্যারিস রোডে অবস্থান নেয় তারা। পরে বেলা সোয়া ১১টার দিকে মিছিল নিয়ে ঢাকা-রাজশাহী মহাসড়ক অবরোধ করেন তারা। এসময় মুক্তিযোদ্ধার সন্তান তাদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেন।

মহাসড়ক অবরোধ রাবি শিক্ষার্থীদের

তারা বিভিন্ন ধরনের স্লোগান দেন- মুক্তিযুদ্ধের মূলকথা, সুযোগের সমতা’, ‘সারা বাংলায় খবর দে, কোটা প্রথার কবর দে’, ‘আঠারোর হাতিয়ার, গর্জে উঠুক আরেকবার’, ‘জেগেছে রে জেগেছে, ছাত্রসমাজ জেগেছে’, ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’, ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায়, বৈষম্যের ঠাই নাই’।

এসময় একাত্মতা প্রকাশ করে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও বিশ্ববিদ্যালয় ফিশারিস বিভাগের ১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী মো. শাহাবুদ্দিন বলেন, আমি চাচ্ছি কোটা আন্দোলন সচল হোক। আমি প্রথম বর্ষ থেকেই বিসিএসের প্রস্তুতি নিচ্ছিলাম, তখন থেকে দেখতাম আমার বন্ধুরাও নিচ্ছে। আমারও যে প্রস্তুতি তাদেরও সেই প্রস্তুতি। তবে আমি কোটা ধারি হওয়ায় হয়তো আমি যদি পরীক্ষা দেই তাদের আগেই আমার চাকরি হয়ে যাবে। কিন্তু আমি চাইনা এমন বৈষম্য হোক। আমি চাই কোটা না থাক। মেধার মাধ্যমে মূল্যায়ন করা হোক। আমি আপনাদের আন্দোলনের পক্ষে আছি। আন্দোলন সফল হোক।

মহাসড়ক অবরোধ রাবি শিক্ষার্থীদের

এদিকে, গতরাত থেকে বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্লাস পরীক্ষা বর্জন করেছে। এর মধ্যে রয়েছে, গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগ, সমাজ কর্ম ও ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি, আইন বিভাগসহ বেশ কিছু বিভাগের শিক্ষার্থীরা। আরও অনেক বিভাগের শিক্ষার্থীরা এ বিষয়ে আলোচনা করছেন বলে জানা গেছে।

এর আগে প্যারিস রোডে, আন্দোলনের সংগঠকেরা ৪ দফা দাবি পেশ করেন। এগুলো হল, ২০১৮ সালের পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে সরকারি চাকুরিতে কোটাপদ্ধতি সংস্কার করতে হবে। কোটায় প্রার্থী না পাওয়া গেলে মেধাকোটায় শূন্যপদ পূরণ করতে হবে, ব্যক্তি তার জীবদ্দশায় সব ধরনের সরকারি প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় একবার কোটা ব্যবহার করতে পারবে। উল্লেখ্য, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় ভর্তি পরীক্ষা এর মধ্যে অন্তর্ভুক্ত থাকবে, প্রতি জনশুমারির সাথে অর্থনৈতিক সমীক্ষার মাধ্যমে বিদ্যমান কোটার পুনর্মূল্যায়ন নিশ্চিত করতে হবে; দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

এসময় আন্দোলনের সংগঠক আলফাজ উদ্দীন বলেন, সাম্য, মানবিক মর্যাদা, সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠায় বাংলাদেশের ছাত্রসমাজ তৎপর ছিল, আছে এবং থাকবে। একটি দেশের সার্বিক উন্নয়নের জন্য সরকারি চাকুরিতে মেধাবীদের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করার লক্ষ্যে, রাষ্ট্রের প্রতিটি নাগরিকের সমান সুযোগ সুবিধা সৃষ্টি করার কোনো বিকল্প নেই। বৈষম্যমূলক কোটাপদ্ধতির সংস্কারের লক্ষ্যে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা সর্বদা সোচ্চার রয়েছে। দাবি আদায় না হলে আমরা ফিরে যাব না।

এসময় আন্দোলনের প্রধান সংগঠক আমানুল্লাহ আমান বলেন, সারাদেশের শিক্ষা প্রতিষ্টানের সাথে এক হয়ে আমাদের আন্দোলন ধারাবাহিক ভাবে চলবে। সামনে আমরা আরও কর্মসূচি পালন করবো। পরবর্তী নির্দেশনা পরে জানিয়ে দেওয়া হবে।

 

মহাসড়ক অবরোধ রাবি শিক্ষার্থীদের

 

প্রসঙ্গত, ২০১৮ সাল পর্যন্ত সরকারি চাকরিতে ৫৬ শতাংশ কোটা প্রচলিত ছিল বাংলাদেশে। তার মাঝে ৩০ শতাংশই ছিল মুক্তিযোদ্ধা কোটা। বাকি কোটার মাঝে ১০ শতাংশ নারী কোটা, ১০ শতাংশ জেলা কোটা, ৫ শতাংশ কোটা ছিল ক্ষুদ্র নৃগোষ্ঠীদের জন্য এবং এক শতাংশ কোটা ছিল প্রতিবন্ধীদের।

ওই বছরই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা কোটা সংস্কারের দাবিতে কোটাবিরোধী আন্দোলন শুরু করে। শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল যে কোটা ৫৬ শতাংশ না হয়ে ১০ শতাংশ করা হোক। তাদের দাবির মুখে সে বছর পুরো কোটা পদ্ধতিই বাতিল করে একটি পরিপত্র জারি করেছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়। কিন্তু ২০২১ সালে কয়েকজন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা ফিরে পাবার জন্য উচ্চ আদালতে রিট করেন এবং গত পাঁচই জুন প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণিতে সরকারি চাকরিতে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিলের সরকারি সিদ্ধান্ত অবৈধ ঘোষণা করে রায় দেয় হাইকোর্ট। তারপর হাইকোর্টের ওই রায় স্থগিত চেয়ে আপিল বিভাগে আবেদন করে রাষ্ট্রপক্ষ। বৃহস্পতিবার সকালে কোটার পক্ষের এক আইনজীবীর আবেদনের প্রেক্ষিতে শুনানি করেনি আদালত।

সুতরাং, সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ হাইকোর্টের এই রায় স্থগিত না করায় পূর্বের নিয়মানুযায়ী সরকারি চাকরির ক্ষেত্রে ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা আপাতত বহাল রয়েছে।

আরও দেখুনঃ