দারিদ্র্য দূরীকরণে শিক্ষা হলো সর্বশ্রেষ্ঠ বিনিয়োগ

দারিদ্র্য দূরীকরণে শিক্ষা: শিক্ষা ও দারিদ্র্যের মধ্যে দ্বান্দ্বিক সম্পর্ক বিরাজমান। শিক্ষার হার যেখানে কম সেখানে দারিদ্র্যের হার বেশি। প্রজন্মের পর প্রজন্ম দরিদ্র জনগোষ্ঠী কি অশিক্ষিতই থাকবে? দারিদ্র দূর করার জন্য চাই শিক্ষা।

বাচ্চাদের মনোযোগ

আর্থিক ও মানসিক দারিদ্র্য দূর করার জন্য আনুষ্ঠানিক বা অন্যান্য প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার প্রয়োজন। প্রাথমিক শিক্ষা পরবর্তী স্তরে মানসম্মত কারিগরি শিক্ষার প্রচলন ও সমন্বয় সম্ভব হলে দেশকে দারিদ্র থেকে মুক্ত করা সম্ভব। বিশ্বায়নের ফলে শিক্ষাখাত বিশাল সম্ভাবনা হিসেবে কাজ করে। তবে শিক্ষাখাতের কাঠামোগত সমস্যার কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না।

দারিদ্র্যের সঙ্গে শিক্ষার সম্পর্ক বিপরীতমূখী ও দ্বান্দ্বিক। সাধারণভাবে চারদিকে তাকালেই তা পরিলক্ষিত হয়। যে মানুষেরা দরিদ্র তারা অধিকাংশই হয় নিরক্ষর না হয় স্বল্পশিক্ষিত। শিক্ষা যত কম দারিদ্র্য তত বেশি। তবে ব্যতিক্রম হিসেবে স্বল্পশিক্ষিত কিছু ধনী লোক আমরা সমাজে দেখতে পাব। 

কিন্তু তাদের এই প্রাচুর্যের পেছনেও তাদের কোনো না কোনো মানসিক শিক্ষা কাজ করেছে। হাবাগোবা বা মানসিকভাবে দরিদ্র মানুষ উত্তরাধিকারী সূত্রে বা লটারির মাধ্যমে ধনী হতে পারে কিন্তু সেটা ব্যতিক্রম নিয়ম নয়। কিন্তু ব্যতিক্রমী অশিক্ষিত ধনীরা সমাজের ভালোর চেয়ে খারাপ বেশি করে থাকে। 

তাই শিক্ষা বলতে শুধু স্কুল-কলেজের আনুষ্ঠানিক শিক্ষা নয়। প্রকৃত মানুষ হয়ে ওঠার জন্য প্রয়োজনীয় সব ধরনের বিদ্যাশিক্ষা। এর জন্য আনুষ্ঠানিক শিক্ষা যথেষ্ট নয়। Digital Birth Registration, ডিজিটাল জন্মনিবন্ধন 3

একজন মুখস্থ করে মাস্টার্স পাস করলেন, কিন্তু এই শিক্ষা কাজে লাগাতে তিনি অক্ষম, তার এত বছরের শিক্ষা বৃথা গেল। তিনি শিক্ষিত বেকার ও সমাজের জন্য বোঝা হয়েই থাকবেন। 

অন্যদিকে একজন বিদ্যালয়ে কোনো দিন গেলেন না কিন্তু জীবনের অভিজ্ঞতা নিয়ে সফল। এমনকি তিনি সমাজ পরিবর্তনে অবদান রাখছেন। তাহলে তাঁকে কি আমরা অশিক্ষিত বলব? অবশ্যই না। প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষা বা প্রাতিষ্ঠানিক  শিক্ষা ছাড়া দুইভাবেই মানুষ ‘শিক্ষিত’ হতে পারে।এবং সমানভাবে সমাজে অবদান রাখতে পারে। 

শিক্ষা ও দারিদ্র্যের সম্পর্ক

‘দারিদ্র্যকে দূর করার জন্য শিক্ষা হোক প্রধান বিনিয়োগ’। পিতা-মাতা যে মাত্রায় আমাদের আনুষ্ঠানিক ও অ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষার ব্যবস্থা করেছেন সে মাত্রায় আমরা একেকজন শিক্ষিত মানুষ হয়ে গড়ে উঠেছি।

যে পরিবারের বাবা- মা অশিক্ষিত ও দরিদ্র তাদের পক্ষে সন্তানদের প্রকৃত শিক্ষা দান সম্ভব নয়। নিজের সন্তানদের উপযুক্ত ভরণপোষণও তাঁদের পক্ষে তাই অসম্ভব। তাই মা-বাবার অশিক্ষিত ও দারিদ্র সন্তানের অশিক্ষা ও দারিদ্র্যের উপর প্রভাব ফেলে।

দেখা যায় যে দরিদ্র পরিবারের সন্তানরা অধিকাংশ ক্ষেত্রে শিক্ষা থেকে বঞ্চিত হন। তাদের আয়-উপার্জনও কম হয়, ফলে তাঁরা দরিদ্রই থেকে যান। 

কর্মসংস্থান সমস্যার সমাধান—শিক্ষা একটি চাবিকাঠি

দারিদ্র্য বিমোচনে কর্মক্ষেত্রে শিক্ষা Copyright by sustain.org
দারিদ্র্য বিমোচনে কর্মক্ষেত্রে শিক্ষা Source: Sustain.org

অর্থনীতিবিদেরা মনে করেন দুভাবে এই উল্লেখিত কর্মসংস্থান-সংক্রান্ত ‘কূটাভাসের’ বাস্তব মীমাংসা সম্ভব। একটি হচ্ছে কর্ম নিয়োগকারীরা তাঁদের মুনাফা কমিয়ে যদি কিছু টাকা শিক্ষার জন্য ব্যবহার করেন। যদি শিল্পপতিরা তার কাছে চাকরিপ্রার্থী বা চাকরিরতদের জন্য ট্রেনিংয়ের ব্যবস্থা করেন। তাহলে শ্রমিকদের প্রয়োজনমতো শিক্ষা দিয়ে এ সমস্যা থেকে তিনি নিজ উদ্যোগেই মুক্ত হতে পারেন। তবে এখানে যৌথ স্বার্থ ও ব্যক্তিস্বার্থের একটি দ্বন্দ্ব থেকে যাবে। 

ধরা যাক কোনো বড়লোক শিল্পপতি আগ্রহী হয়ে ট্রেনিং ইনস্টিটিউট তৈরি করলেন। এবং পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ এবং তাত্বিক শিক্ষায় শিক্ষিত করলো। এক্ষেত্রে একটা সংসয় থেকেই যায় যে, তাঁর প্রশিক্ষণ ইনস্টিটিউটের পাস করা ছাত্রকে অন্য কোনো মালিক বেশি বেতনের লোভ দেখিয়ে ভাগিয়ে নিতে পারেন। এই সমস্যাকে অর্থনীতির পরিভাষায় বলে বাহ্যিক সাশ্রয়। অর্থাত্ কাজ করলাম আমি কিন্তু ফল পাচ্ছে অন্যজন। ফলে এ অবস্থায় কাজটি কেউই করতে আগ্রহী হচ্ছে না। এতে করে অর্থনীতি ও শিক্ষার মধ্যে দ্বন্দ্ব থেকেই যাচ্ছে।

১. কয়েকটি মৌলিক শিক্ষাকে আপামর জনগণের নাগালের মধ্যে নিয়ে যেতে হবে। মোট কথায় পড়তে পারা, লিখতে পারা ও গুনতে পারা—এই ক্ষমতাগুলোকে সবার জন্য বাধ্যতামূলক ও গ্রহণযোগ্য করতে হবে। এই সর্বজনীন প্রাথমিক শিক্ষার গুণগত মান হতে হবে Basic Competence বা মৌলিক দক্ষতা সম্পূর্ণ। যাতে সেই শিক্ষাটা অল্প বয়সেই প্রত্যেকে অর্জনে সক্ষম হয়। 

২. তারপর যে পরবর্তী ধাপের শিক্ষা হবে সে শিক্ষার ধরনটি হবে কর্মমুখী এবং অর্থনীতির সঙ্গে সামঞ্জস্যপূর্ণ । এই শিক্ষাব্যবস্থা হবে বিশ্বমানের বা গ্লোবাল স্ট্যান্ডার্ড। তাহলে দেশে-বিদেশে কর্মসংস্থানে কোনো বাধা থাকবে না। 

শিক্ষিত হয়ে হাত গুটিয়ে বসে থাকার দুঃসহ অভিশাপ থেকে রক্ষা সমাজ। আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে প্রতিযোগিতায় সক্ষম একটি জাতি হিসেবে মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে সক্ষম হব। মানবসম্পদকে কাজে লাগিয়ে উন্নয়ন ও দারিদ্র্য দূরীকরণের যে পরিকল্পনা তা এই যৌক্তিক ভিত্তির ওপরই দাঁড়িয়ে আছে।

 

দারিদ্র্য বিমোচনে কর্মক্ষেত্রে শিক্ষা Copyright by sustain.org

 

দারিদ্র্য দূরীকরণের জন্য শিক্ষা: সামষ্টিক কার্যকারণ চক্র

ক. শিশু বয়সেই বিদ্যালয়ে ভর্তি না হওয়ার সমস্যা। শুধু আর্থিক কারণে নয়, কাছাকাছি কোনো বিদ্যালয় না থাকাও এর কারণ হতে পারে। এর ফলে নিরক্ষর মানুষ তৈরি হচ্ছে।

খ. দরিদ্রদের পরিবারের যারা অবশেষে ভর্তি হতে পারে তাদের মধ্যেও প্রাথমিক শিক্ষার জন্য যে পাঁচ বছর পর্যন্ত সময় ব্যয় করতে হয় সেটুকু সময় উপার্জনহীনভাবে ব্যয় করার বিলাসিতা সম্ভব নয়। ফলে সৃষ্টি হয় মাঝপথে ঝরে পড়া অসমাপ্ত শিক্ষার সমস্যা। এই স্বল্প বা অর্ধশিক্ষিত ব্যক্তিদের আর কখনোই পরবর্তী সময়ে শিক্ষালাভের সুযোগ তৈরি হয় না।

গ. এই নিরক্ষর ও স্বল্পশিক্ষিতরা হয় বেকার অথবা অর্ধবেকার থাকে অথবা কাজ পেলেও তাদের কাজের উত্পাদনশীলতা ও মজুরি কম থাকে। ফলে দারিদ্র্য জমা হতে থাকে ও টিকে থাকে।

তবে সুখবর হচ্ছে যে বাংলাদেশ সরকার সম্প্রতি উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা বোর্ডের আইন পাস করেছে। এটি কার্যকর হলে ঝরে পড়া লোকদেরও নতুন করে লেখাপড়ার সুযোগ তৈরি হবে। যার মাধ্যমে শিক্ষা দারিদ্র দূরীকরণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। 

দারিদ্র্য দূরীকরণে শিক্ষার ভূমিকা সম্পর্কে জানতে

এডুকেশন নিউজ সাইটটি ব্যবহার করায় আপনাকে ধন্যবাদ। আমাদের সাথে যোগাযোগ করতে চাইলে “যোগাযোগ” আর্টিকেলটি দেখুন, যোগাযোগের বিস্তারিত দেয়া আছে।

আরও দেখুন:

  • এডুকেশন নিউজ: পরীক্ষার প্রস্তুতি নেওয়ার কিছু কৌশল